এসিড বৃষ্টি (Acid Rain) (৯.৩.৫)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - দুর্যোগের সাথে বসবাস | NCTB BOOK
1.8k
Summary

এসিড বৃষ্টি: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

এসিড বৃষ্টি সাধারণত বৃষ্টির মধ্যে উচ্চ মাত্রার এসিড থাকে, যা পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করে। এর প্রধান উপাদান হল:

  • সালফিউরিক এসিড
  • নাইট্রিক এসিড
  • হাইড্রোক্লোরিক এসিড (অল্প পরিমাণে)

এসিড বৃষ্টির ফলে গাছপালার মৃত্তিকায় প্রয়োজনীয় উপাদান বর্ষিত হয়ে যায়, ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং জলসম্পদ ও জলজ প্রাণীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। pH ৫-এর নিচে নামলে মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং এটি মানবদেহের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।

এসিড বৃষ্টির কারণ:

প্রাকৃতিক (যেমন: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বজ্রপাত) এবং মানবসৃষ্ট (যেমন: শিল্প কারখানা, যানবাহন) উভয় কারণে এসিড বৃষ্টি ঘটে।

এর প্রতিকার:

  • কয়লার পরিশোধন করে সালফার এবং নাইট্রোজেন মুক্ত করা
  • বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার
  • লাইমস্টোন ব্যবহার করে মাটির অম্লতা কমানো
  • দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ

বাংলাদেশে অতিরিক্ত এসিড বৃষ্টি হয় না, তবে শিল্পসংক্রান্ত দেশে এটি একটি বড় সমস্যা।

সাধারণত বৃষ্টিপাত এমনিতেই খানিকটা এসিডিক। তবে যখন বৃষ্টিতে অনেক বেশি পরিমাণ এসিড বিদ্যমান থাকে, তখন তাকে এসিড বৃষ্টি বলে। তোমরা কি জান, এসিড বৃষ্টিতে কী কী এসিफ থাকে? এসিড বৃষ্টিতে সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিড বেশি থাকে এবং অল্প পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে। এসিড বৃষ্টি পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। এসিড বৃষ্টিতে এসিডের প্রতি সংবেদনশীল অনেক গাছ মরে যায়। এছাড়া কিছু অতি প্রয়োজনীয় উপাদান (যেমন: Ca, Mg) এসিড বৃষ্টিতে দ্রবীভূত হয়ে মাটি থেকে সরে যায়, যা ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসিড বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পানিসম্পদ এবং জলজ প্রাণীগুলোর। তোমরা জান যে, পানিতে এসিড থাকলে pH ৭-এর কম হয়। pH এর মান ৫-এর কম হলে বেশির ভাগ মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তখন মাছ উৎপাদন ব্যাহত হয়। মাছের রেঙ্গু বা পোনা এসিডের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এসিডের মাত্রা বেশি হলে পুরো জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মানুষের শরীরের জন্যও এসিড বৃষ্টি ক্ষতিকর এসিড বৃষ্টি মানবদেহে হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করতে পারে ।
 

এসিড বৃষ্টি কেন হয়?
এসিড বৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক ও মনুষ্য-সৃষ্ট দুই কারণই জড়িত। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মাঝে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, বজ্রপাত, পাছপালার পচন ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড গ্যাস বের হয়, যা পরে বাতাসের অক্সিজেন আর বৃষ্টির পানির সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে নাইট্রিক এসিড এবং সালফিউরিক এসিড তৈরি করে। একইভাবে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা বিশেষ করে কয়লা বা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ইটের ভাটা (চিত্র ৯.০৮), যানবাহন, গৃহস্থালির চুলা ইত্যাদি উৎস থেকেও সালফার ডাই-অক্সাইড বের হয়, যা এসিডে পরিণত হয় এবং বৃষ্টির পানির সাথে মিলে এসিড বৃষ্টি তৈরি করে। এখন দেখা যাক এসিড বৃষ্টি হলে আমাদের কী কী করণীর আছে? যেহেতু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার ডাই- অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়, সেহেতু ব্যবহারের আগে কয়লা পরিশোধন করে সালফার নাইট্রোজেন মুক্ত করে নিতে হবে। পরিবেশ সচেতন অনেক দেশেই ইতোমধ্যেই এই ব্যবস্থা চালু আছে। পরিশোধন ব্যবস্থা না থাকলে কয়লার পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এসিড বৃষ্টি হলে মাটির pH কমে যায় এবং সেক্ষেত্রে লাইমস্টোন বা চুনাপাথর ব্যবহার করে এসিডিটি কমানো যায় । এছাড়া শিল্প-কারখানা এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প-কারখানায় দূষণরোধক পদ্ধতি অবশ্যই বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে এসিড বৃষ্টি খুব একটা হয় না। যেসব দেশে শিল্প-কারখানা অনেক বেশি, সেখানে এর আশঙ্কাও অনেক বেশি। পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ, আমেরিকা, কানাডা এবং চীনের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে ও তাইওয়ানে ঘন ঘন এসিড বৃষ্টি হয়।

 

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...